বিবিসিনিউজ২৪,ডেস্কঃ বগুড়ার মেয়ে “শামিমা আক্তার “।যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, সফল ব্যবসায়ী। তিনি ২০২০ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যান জীবন সংগ্রামের একটি অংশ অনলাইন ব্যবসা।তবে থেমে থাকেননি তিনি। দুর্গম পথ এবং ব্যার্থতার গ্লানি উপেক্ষা করে আজ সাফল্যর দ্বারপ্রান্তে ” শামিমা আক্তার “।হাটি হাটি পা পা করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বগুড়ার সফল নারী উদ্যোক্তা।
”উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।বগুড়ার মেয়ে “শামিমা আক্তার ” এর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিবিসিনিউজ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
আপনার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আসসালামু আলাইকুম,আমি শামিমা আক্তার বগুড়ার মেয়ে তবে চাকুরীর সুবাদে থাকি নওগাঁ জেলায়। আমি পেশায় একজন শিক্ষক।
উদ্যোক্তা আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো?
এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করার পর থেকেই ইচ্ছা হতো কিছু একটা করার। তখন থেকেই একটু একটু করে সেলাই করি আর ধীরে ধীরে সেলাই টা কেমন জানি নেশাই পরিণত হয়ে যায় আর একটু একটু করে নিজেই ডিজাইন করা শুরু করি। তাই ভাবলাম কেননা নিজের ডিজাইন আর সেলাই দিয়েই কিছু একটা করি। আমার সেলাই করা ড্রেসগুলো পরিচিত মহলে বেশ সাড়া ফেলে দিল। তারপর চাকুরীর নেশা মাথা থেকে নামিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করলাম। তখন মূলত আমার কাজ ছিল অফলাইন। পরে একটা চাকুরীও হয়ে গেল। তবে আমার ব্যবসা টায় আমার কাছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও আমি মনে করি প্রতিটা নারীকেই নিজ যায়গা থেকে সাবলম্বী হয়ে ওঠা টা খুব বেশি প্রয়োজন।
আপনি এই অনলাইন বিজনেসে কাকে আইডল হিসেবে দেখছেন?
আমার বিজনেস টা শুরু থেকে ছিল মূলত অফলাইন আর অনলাইনে বিজনেস শুরু করেছি ২০১৯ থেকে। যদি জানতে চান আইডল হিসাবে কাকে দেখেছি তবে সত্যিই বলতে হবে এমন করে কাউকে অনুসরণ করা হয়নি। তবে হ্যা বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ ও অনেক লাইভ দেখেছি দিনের পর দিন আবার অনলাইনে অল্প কিছু কেনাকাটা করে বোঝার চেষ্টা করেছি কেমন ফলাফল পাওয়া যায়। সবকিছু একটু একটু করে বোঝার পর নিজের পেজ ওপেন করা ও অনলাইনে কাজ শুরু করা। তবে এখন অনলাইনে বেশ সাড়া পাচ্ছি আমি।
কতটুকু সফলতা লাভ করেছেন বলে মনে করেন?
আলহামদুলিল্লাহ অনলাইন এবং অফলাইন ২ ক্ষেত্রেই আমি আমার সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমি উদ্যোক্তা হিসাবে কতটুকু সফল তা আমি বলব না, তবে হ্যা এতটুকু বলব যে করোনার মতো মহা মারিতেও আমার বিজনেস থেমে ছিলো না। আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাস্টমারদের সেবা দিয়ে গিয়েছি। এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি এটাই তো সফলতা। নিজেকে সাবলম্বী করেছি তার সাথে সাথে বেশ কিছু অসহায় নারী কর্মী তৈরি করেছি যারা সবসময় আমার কাজগুলো মন দিয়ে সম্পন্ন করে, এবং আমার কাজ করে আজ তারাও অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে।
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
আমার কাজগুলো যেহেতু আমি নিজেই ডিজাইন করি তাই কারো সাথে আমার কাজের হুবহু মিল খুজে পাওয়া যাবে না। আরও ইউনিক ডিজাইনের কাজ করার ইচ্ছা আছে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। উদ্যোক্তা হওয়ার পথের এই যাত্রা চলবে অবিরত।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি বলতেন?
বাবার চাকুরীর সুবাদে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে SSC এবং HSC কমপ্লিট করেছি এবং বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে Mathematics নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করছি।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে মোকাবেলা করেছেন?
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা খুব বেশি সহজ ছিলো না। আশেপাশের মানুষ পরিবারের মানুষ কেউ কথা শুনাতে বাদ রাখেনি, সবাই বলত এতো ভালো ছাত্রী ভালো একটা বিষয় নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করল আর সেই মেয়েটা শেষে কি না সুঁই সুতা দিনরাত কাটিয়ে দিচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম নিজের প্রতি ও নিজের কাজের প্রতি। প্রথম দিকে অনলাইনে খুব বেশি সাড়া পাইনি হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতো না। কারণ কিছু কিছু ফেক সেলারদের জন্য আমাদের মতো অনেক উদ্যোক্তাকেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমার কাজের নিপুণতা দেখে ও নতুন নতুন সব কালেকশন দেখে ধীরে ধীরে সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে। পেজে রিভিউ আসতে থাকে, কাস্টমার বাড়তে থাকে, এখন তো আমার বিদেশি কাস্টমারও আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার পেজের কাস্টমারগুলো বরাবরই আমার রিপিট কাস্টমার হয়।
আপনার নতুন প্রোডাক্ট গুলো কি কি?
আমি মূলত ব্লাউজ, থ্রীপিস, ওয়ানপিস, ওড়না, কুশন কভার, বেডশিট ও বেবিড্রেস নিয়ে কাজ করি। কাস্টমাইজড ডিজাইনের অর্ডার নিয়ে কাজ করি।
আর নতুন প্রডাক্ট বলতে এখন সুতার তৈরি যাবতীয় গহনার কালেকশন নিয়ে আসব ও তার সাথে নিয়ে আসব সুতা দিয়ে অসাধারণ ডিজাইনের বাধাই করা ঝাড়ু।
বর্তমানে কভিড১৯ এ ই-কমার্স?
কভিড-১৯ আমাদের জীবনের চলার গতিতে এমন ভাবে আঘাত হেনেছে যা কাটিয়ে উঠতে আরও বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। তবে এটা বলতেই হবে যে করোনার কারণে মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়া অনেকটা কমে গেছে, তাই বেড়ে উঠেছে অনলাইনে কেনাকাটাও। নিরাপদ ও ঝামেলা মুক্ত ভাবে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। আর এখানেও অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে কুরিয়ার ও বিভিন্ন পরিবহণ সার্ভিস গুলো। মানুষ ধীরে ধীরে বিশ্বাস করছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। যদি কোনভাবে এই বাধা টা কাটিয়ে ওঠা যায় তবে অনলাইন বিজনেস মানুষের মনে অনেক বড় একটা বিশ্বাসের যায়গা তৈরি করতে পারবে। আর আমরাও অর্থনৈতিক জিডিপি তে ভালো একটা ভূমিকা রাখতে পারব বলে আশা করছি।
পরিশেষে স্রোতাদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলুন?
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমরা পারি, আমরা পারবই, আমাদেরকে পারতেই হবে এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবেন। বিশ্বাস রাখবেন নিজের প্রতি, সৎ থাকবেন, ধৈর্য্য রাখবেন সফলতা একদিন নিশ্চই আসবে। আর সম্মানিত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা অনলাইনে কেনাকাটা করবেন অবশ্যই তবে একটু খেয়াল করে পেজের সত্যতা যাচাই করে, কাস্টমার রিভিউ দেখে এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি তে। তবে যারা প্রি অর্ডার নিয়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা, সেক্ষেত্রে কাস্টমার অবশ্যই তার ভরসার পেজ থেকেই প্রি অর্ডার বেজ অর্ডার গুলো দিয়ে থাকে। পরিশেষে এটাই বলব যদি ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই সকলের বিশ্বাস টা রক্ষা করে চলি তবে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব। কারণ বিজনেস টা একদিনের জন্য নয় বিজনেস টা সারাজীবনের। আর এটাই আপনার পরিচয়। সকলেই দোয়া রাখবেন আমার জন্য, ধন্যবাদ।