বিবিসিনিউজ২৪,ডেস্কঃ ঢাকার মেয়ে “নিশাত আঞ্জুম সন্ধি “।যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, সফল ব্যবসায়ী। তিনি ২০২০ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যান জীবন সংগ্রামের একটি অংশ অনলাইন ব্যবসা।তবে থেমে থাকেননি তিনি। দুর্গম পথ এবং ব্যার্থতার গ্লানি উপেক্ষা করে আজ সাফল্যর দ্বারপ্রান্তে ” নিশাত আঞ্জুম সন্ধি “।হাটি হাটি পা পা করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে তিনি হয়ে উঠেন ঢাকার সফল নারী উদ্যোক্তা।
”উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।ঢাকার মেয়ে “নিশাত আঞ্জুম সন্ধি ” এর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিবিসিনিউজ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
আপনার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আসসালামু আলাইকুম,বাবা মা নাম রেখেছিলেন নিশাত আঞ্জুম সন্ধি, বর্তমানে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছি ইউনিভার্সিটি ওফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে, ফাইনাল ইয়ারে আছি। পাশাপাশি একজন আর্টিস্ট হিসেবে নিজের চিত্রকর্ম, হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করছি।আর আমার স্কুল, কলেজ ছিলো মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরি হাই স্কুল এন্ড কলেজ। বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কর্মরত আছেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন- এ। মা গৃহিনী আর আমার ছোট ভাই ইন্টার পাশ করে এডমিশন টেস্ট ক্যান্ডিডেট।
উদ্যোক্তা আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো?
আসলে উদ্যোক্তা হবার চিন্তা, পরিকল্পনা কিছুই ছিলো না। ছোট থেকেই ভালো আঁকতে পারতাম, কখনোই কারো থেকে শেখা হয়নি, ইন্টারনেট ও ছিলো না। তবে ছোট থেকেই যেটা ভালো লাগতো সেটা চেষ্টা করতেই মজা লাগতো।কাউকে কপি করেও কখনো শিখতে ইচ্ছা হতো না। সম্পূর্ণ নিজের মতো ছিলাম। ভার্সিটি তে উঠে একটা এক্সিবিশন করেছিলাম, আমার ২টি চিত্রকর্ম ই বিক্রি হয়। ওখান থেকেই উৎসাহ পেয়েছি যে এটাকে সামনে আগানো সম্ভব। এরপর এক এক করে অনেক গুলো চিত্রকর্ম করেছি, বিক্রি করেছি। আমার এই চিত্রকর্ম গুলো বেশির ভাগ থাকে ক্যানভাস, মাটির পাত্র, কাঁচের পাত্রের,কাঠের উপর। এখন আমি হ্যান্ড পেইন্টেড জামা, পাঞ্জাবি, শাড়ি ইত্যাদি তৈরি করা শুরু করেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। দোয়া করবেন। এগিয়ে যেতে চাই।
আপনি এই অনলাইন বিজনেসে কাকে আইডল হিসেবে দেখছেন?
আমার কোনো আইডল ছিলো না, তবে এখন একজন আপু কে আমার খুব ভালো লাগে।কারন আপুর শুরুটাও আমার মতোই ছিলো, আপুর ইচ্ছাগুলোর সাথে আমার স্বপ্নের মিল আছে। উনি “স্বরদিন্দু” এর প্রতিষ্ঠাতা সুরভী আপু।
কতটুকু সফলতা লাভ করেছেন বলে মনে করেন?
পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করাটা কিন্তু অনেক কঠিন ই। বিভিন্ন চিন্তা কাজ করে, একটা কাজ করতে যে সময় দিতে হয়, দেখা যায় একটা কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজ করতে হচ্ছে। ম্যানেজ করে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেদিক থেকে সবকিছু ম্যানেজ করে আমি এতো এতো সাড়া পেয়েছি, এটা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।পাওনার থেকে অনেক বেশি মনে হয়েছে। আমার কাছে আমি সফল এবং সফলতার পথে হাঁটছি।
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এটাই যে আমি কারো কোনো নেগেটিভ কথা, চিন্তা না শুনে নিজের মতো কাজ করতে চাই। নিজের ভালো লাগার কাজ ই করতে চাই। ভবিষ্যতে নিজের ব্র্যান্ডের সাথে মানুষকে পরিচিত করাতে চাই। যেখানে নিজের ডিজাইন করা সব কালেকশন থাকবে।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি বলতেন?
ওই যে বললাম, ইউনিভার্সিটি ওফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছি এখন, ফাইনাল ইয়ারে আছি। আর স্কুল কলেজ দুটোই ছিলো মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে মোকাবেলা করেছেন?
আসলে আমার বাবা মা অনেক সাপোর্টিভ, আমার যা ভালো লাগবে সেটাতে তেমন বাধা দেন নি কখনো। আর আমিও সবসময় নিজের যা যা ভালো লেগেছে, তা ই করেছি।আম্মু আব্বু সবসময় প্রশংসা ই করতেন, উৎসাহ দিতেন। বাবা মায়ের কাছে যেন আমরা ই সেরা।তবে আমার ভালো লাগার কাজে কেউ বাঁধা দিলেও শুনিনি কখনো, ইন শা আল্লাহ শুনবো ও না। সবার কাছেই ভালো লাগতে হবে এমন তো নয়।যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের কাছে আমার ভালো থাকাই মূখ্য বিষয় হবে।
আপনার নতুন প্রোডাক্ট গুলো কি কি?
আমার নতুন প্রোডাক্টগুলো হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি, ড্রেস। এখনো হাতে অনেক কাজ পড়ে আছে। সেগুলোই করছি এখন।
বর্তমানে কভিড১৯ এ ই-কমার্স?
কভিড১৯ এর জন্য যেমন অনেক কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ঠিক তেমনি এর কিছু পজিটিভ দিক ও তৈরি হয়েছে। লকডাউন সময়ে আমি দেখেছি, ঘরে ঘরে মেয়েরা নতুন নতুন জিনিস শিখেছে, বিজনেস শুরু করেছে, রান্না শিখছে, নাচ শিখছে, নতুন নতুন জিনিস তৈরি করছে, হাতের কাজ করছে। কেউ বাসায় বানানো খাবার অফিস, স্কুলে পাঠাচ্ছে, অনেকে খুব সুন্দর সুন্দর ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করছে, বাসায় বসে অনেক কিছু শিখছে এবং সেগুলোকে বিজনেসে আনার চেষ্টা করেছে। আগে কখনো এমনটা দেখিনি। খুব ই ভালো লেগেছে। সবাই ই এখন কিছু না কিছু করতে চায়। সেটা বাহিরে হোক, আর বাসায় বসে হোক। এটা দারুন বিষয়।
পরিশেষে স্রোতাদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলুন?
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমরা পারি, আমরা পারবই, আমাদেরকে পারতেই হবে এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবেন। বিশ্বাস রাখবেন নিজের প্রতি, সৎ থাকবেন, ধৈর্য্য রাখবেন সফলতা একদিন নিশ্চই আসবে। আর সম্মানিত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা অনলাইনে কেনাকাটা করবেন অবশ্যই তবে একটু খেয়াল করে পেজের সত্যতা যাচাই করে, কাস্টমার রিভিউ দেখে এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি তে। তবে যারা প্রি অর্ডার নিয়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা, সেক্ষেত্রে কাস্টমার অবশ্যই তার ভরসার পেজ থেকেই প্রি অর্ডার বেজ অর্ডার গুলো দিয়ে থাকে। পরিশেষে এটাই বলব যদি ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই সকলের বিশ্বাস টা রক্ষা করে চলি তবে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব। কারণ বিজনেস টা একদিনের জন্য নয় বিজনেস টা সারাজীবনের। আর এটাই আপনার পরিচয়। সকলেই দোয়া রাখবেন আমার জন্য, ধন্যবাদ।