বিবিসিনিউজ২৪,ডেস্কঃ কুমিল্লার মেয়ে “রহিমা আক্তার রিভা “।যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, সফল ব্যবসায়ী। তিনি ২০২০ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যান জীবন সংগ্রামের একটি অংশ অনলাইন ব্যবসা।তবে থেমে থাকেননি তিনি। দুর্গম পথ এবং ব্যার্থতার গ্লানি উপেক্ষা করে আজ সাফল্যর দ্বারপ্রান্তে ” রহিমা আক্তার রিভা “।হাটি হাটি পা পা করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে তিনি হয়ে উঠেন কুমিল্লার সফল নারী উদ্যোক্তা।
”উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।কুমিল্লার মেয়ে “রহিমা আক্তার রিভা ” এর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিবিসিনিউজ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
আপনার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আসসালামু আলাইকুম ।আমি রহিমা আক্তার রিভা ।আমি কুমিল্লার মেয়ে , কুমিল্লায় আমার ছোট বেলা থেকে বেড়ে উঠা,পড়াশুনা। কর্পোরেট জব এর সূত্রে ঢাকায় আসা ২০১৬ এর শেষ এর দিকে।একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে জব আর তখন থেকেই ঢাকায় থাকা।
উদ্দ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ কিভাবে তৈরী হল?
যে কোন কাজ করার আগে লক্ষস্থীর করতে হয়, মনের মধ্যে বাসনা তেরী করতে হয় ।তেমনি নিজেকে উদ্দ্যোক্তা হিসেবে দেখতে প্রয়োজন সৃজনশীলতা, আকাংঙ্খা আর নেতৃত্বের ক্ষমতা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, আমার বাবা একজন সৎ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মাধ্যমিকের আগে থেকেই টিউশন,শিক্ষকতা সহ উচ্চমাধ্যমিকের পর থেকেই ভিবিন্ন প্রতিষ্ঠানে জব এর পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যাই ।নানান প্রতিকুলতার মুখোমুখিই হতে হয়েছে।সেই থেকে ইচ্ছে নিজেকেই কিছু করতে হবে নিজের জন্য পরিবারের জন্য .২০১৭ সালের দিকে একটা পেইজ এর সাথে রিসেলিং এর কাজ শুরু করি। সেই থেকেই ধীরেধীরে নিজের মধ্যে উদ্দোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জাগে.২০১৮ সালে একটা পেইজ ক্রিয়েট করে কাজ করি। তারপর থেকেই আগ্রহ তৈরী হতে থাকে এই অনলাইন জগতেই নিজেকে কিছু করার। তবে এটআ আমার সখ নয়, আমার প্রয়োজন।
আপনি এই অনলাইন বিজন্যাস এ কাকে আইডল হিসেবে দেখেছেন?
এই অনলাইন জগতে আসা আমার একজন রিসেলার হিসেবে । যার নিঃশ্বার্থ সহযোগিতায় আজকের এই আমি এই অনলাইন জগতে উদ্দোক্তা হওয়ার সাহস পেয়েছি , তিনি খুব বড় মাপের কেউ না তবে আমি উনাকে রেস্পেক্ট করি যথেষ্ঠ। আমার দেখা যথেষ্ট পরীশ্রমী ও সফল একজন মানুষ, হয়তো সবার কাছে উনি ভাল নাও হতে পারে তবে আমার এই অনলাইন জগতে একজন উদ্দোক্তা হওয়ার সাহস সহযোগীতা আরে মনোবল আমি উনার থেকে পেয়েছি ।উনার জন্য ও আমার অনেক শুভকামনা ।
কতটুকু সফলতা লাভ করেছেন বলে মনে করেন?
সফলতা কখনো একদিনে আসেনা, সফলতা আসে ধীরে ধীরে, ধৈর্য্য পরিশ্রম আর সততার সাথে গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেই একসময় সফলতা আসবে।’যেখানে প্রতিযোগিতা কম আর যে পণ্যের চাহিদা রয়েছে সে রকম ভীন্ন রকম পণ্য গ্রাহকের কাছে তুলে ধরতে পারলেই সফলতা সহজেই আসবে।আর সেই চেষ্টাই করছি।
আপনার ভবিষৎ পরকল্পনা কি?
যে কোন কাজ পরিকল্পনা ছাড়া হয়না , আগামী দিনে কি করবো তার একটা পরিকল্পনা করেই সামনে এগুতে হয়। একজন উদ্দোক্তাকে ভবিষৎ পরিকল্পনা সঠিক নির্দেশনায় নিজের শ্রম আর সততার মাধ্যমে লক্ষে পৌঁছানো, বিশ্বস্ততার সাথে এই অনলাইন জগতের বাহিরেও অফলাইন জগতে নিজের একটা বিশ্বস্ত জগত তৈরী করা। আমার পেইজ “Closet By Riva” কে ব্র্যান্ডিং এ রুপান্তরিত করা।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি বলতেন?
আমি কুমিল্লা জেলার নাংগল্কোট উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠান মন্তলী রাহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৮ সালে দাখিল ও ২০১০ সালে আলিম পাশ করি। তারপর লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারী কলেজ থেকে একাউন্টিং এ গ্রেজুয়েশান ও কুমিল্লা ভিক্টরিয়া সরকারী কলেজ থেকে ২০১৮ সালে পোস্ত গ্রেজুয়েশ্ন কমপ্লিট করি।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে মোকাবেলা করছেন?
উদ্দোক্তা জীবনে অনলাইন জগতের এখন প্রতিটা পদক্ষেপই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হচ্ছে কারণ, অনলাইন জগতে বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতা সর্বত্র বিদ্যমান। পণ্য নির্বাাচন থেকে শুরু করে পণ্যের গুণগত মান, পন্যের মানের সাথে মিল রেখে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতার চাহিদানুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা প্রতিটা ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। পণ্য সরবরাহের পরে গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারো যদি পণ্য নিয়ে কোনরকম আপত্তি থাকে, পণ্যের ছবি্র সাথে রঙ মিল না থাকা ,তাহলে সেটা তাক্ষৎনিকভাবে ফেরত নেয়া, বিকল্প পণ্য বা মূল্য ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করেছি । এরকম অভিযোগ গুলো যত তাড়াতাড়ি সমাধান করা যাবে,একজন উদ্দোক্তা বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য সেটাই মঙ্গল।
আপনার নতুন প্রডাক্টস গুলো কি কি?
আমি কাজ করছি আমাদের দেশিয় পণ্য নিয়ে এতে রয়েছে মেয়েদেরআনস্টীচ থ্রীপিজ, স্টীচ কুরতি, তাত, মনিপুরী সহ ভিবিন্ন রকম শাড়ি নিয়ে । এসবের সাথে নতুন করে কাজ করছি ঐতিহ্যবাহী জামদানী শাড়ি নিয়ে যাতে আমি সাড়া পাচ্ছি ভালো আলহামদুলিল্লাহ।
বর্তমানে কভিড১৯ ই- কমার্স?
কভিড১৯ বা করোনা ভাইরাস একটি মরণব্যাধি ভাইরাস। করোনাভাইরাসের কারণে অনলাইনে পণ্য কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে, ঠিক অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে লক ডাউনে বসে অনেকেই অবসর সময় কে কাজে লাগিয়ে অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন। করোনাকালে অনলাইনে কেনাকাটা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ।কারণ লকডাউন এর সময় নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে অধিকাংশ জনগন নিত্যপ্রয়োজোনীয় দ্রব্য কেনাকাটায় অনলাইন বা ই-কমার্স কে বেশী প্রাধান্য দিয়েছে। আর এই সুযোগে একটি চক্র মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেও্যার ঘটনা ও ঘটেছে। এদের কে থামানো গেলেই ই-কমার্স জগত আর বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে।
পরিশেষে স্রোতাদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলুন?
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমরা পারি, আমরা পারবই, আমাদেরকে পারতেই হবে এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবেন। বিশ্বাস রাখবেন নিজের প্রতি, সৎ থাকবেন, ধৈর্য্য রাখবেন সফলতা একদিন নিশ্চই আসবে। আর সম্মানিত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা অনলাইনে কেনাকাটা করবেন অবশ্যই তবে একটু খেয়াল করে পেজের সত্যতা যাচাই করে, কাস্টমার রিভিউ দেখে এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি তে। তবে যারা প্রি অর্ডার নিয়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা, সেক্ষেত্রে কাস্টমার অবশ্যই তার ভরসার পেজ থেকেই প্রি অর্ডার বেজ অর্ডার গুলো দিয়ে থাকে। পরিশেষে এটাই বলব যদি ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই সকলের বিশ্বাস টা রক্ষা করে চলি তবে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব। কারণ বিজনেস টা একদিনের জন্য নয় বিজনেস টা সারাজীবনের। আর এটাই আপনার পরিচয়। সকলেই দোয়া রাখবেন আমার জন্য, ধন্যবাদ।